কবি পরিচিতি | অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত



কবি পরিচিতি
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত


(১৯শে সেপ্টেম্বর, ১৯০৩ — ২৯শে জানুয়ারি, ১৯৭৬) একজন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক। পিতার কর্মস্থল নোয়াখালী শহরে তাঁর জন্ম হয়। তবে তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান মাদারিপুর জেলায়। তাঁর বাবা রাজকুমার সেনগুপ্ত নোয়াখালী আদালতের আইনজীবী ছিলেন।

অচিন্ত্যকুমারের শৈশব, বাল্যজীবন, ও প্রাথমিক শিক্ষা নোয়াখালীতেই সম্পন্ন হয়। ১৯১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় অগ্রজ জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের নিকট চলে যান এবং সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২০), সাউথ সাবার্বান কলেজ (বর্তমান আশুতোষ কলেজ) থেকে আই. এ. (১৯২২), এবং ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ বি. এ. (১৯২৪) পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম. এ (১৯২৬) ও পরবর্তীতে বি. এল ডিগ্রী (১৯২৯) লাভ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ক্রমে সাব-জজ, জেলা জজ ও ল' কমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস বেদে (১৯২৮)। এটি আঙ্গিক, রচনাভঙ্গি ও বিষয়বিন্যাসে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট উপন্যাস হিসেবে পরিগণিত। তাঁর লেখায় আধুনিকতা অতি প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। রোমান্টিকতা ও গণচেতনা উভয়ই তাঁর কবিতার ভাববস্ত্ত। ছোটগল্প রচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কাকজ্যোৎস্না " প্রথম কদমফুল তাঁর অন্য দুইটি বিখ্যাত উপন্যাস। ছোটগল্পশিল্পী হিসেবেও তিনি খ্যাত। বিচারবিভাগে চাকরির দৌলতে তিনি বাংলাদেশের নানা স্থানে ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সংস্পর্শে আসেন; এইসব অন্তরঙ্গ পরিচিতজনদের জীবনের নানা কাহিনী অচিন্ত্যকুমার তাঁর ছোট গল্পগুলিতে নিপুণভাবে এঁকেছেন। টুটাফাটা (১৯২৮) তাঁর প্রথম ছোট গল্পের বই।
অচিন্ত্যকুমারের গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় সত্তর। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- উপন্যাস: কাকজ্যোৎস্না (১৯৩১), বিবাহের চেয়ে বড় (১৯৩১), প্রাচীর ও প্রান্তর (১৯৩২), প্রথম কদমফুল (১৯৬১); কাব্যগ্রন্থ: অমাবস্যা (১৯৩০), আমরা (১৯৩২), প্রিয়া ও পৃথিবী (১৯৩৩), নীল আকাশ (১৯৪৯), পূর্ব-পশ্চিম (১৯৬৯), উত্তরায়ণ (১৯৭৪); জীবনীগ্রন্থ: পরম পুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (চার খন্ড, ১৯৫১-৫৬), বীরেশ্বর বিবেকানন্দ (তিন খন্ড, ১৯৫৮-৬৯); নাটক: একাঙ্ক নাট্য-সংকলন (১৯৪৫); গল্পগ্রন্থ: টুটাফুটা (১৯২৮), কাঠ-খড় কেরোসিন (১৯৪৫), চাষাভূষা (১৯৪৭), একরাত্রি (১৯৬১) ইত্যাদি।

অচিন্ত্যকুমার ১৯২৫ সালে কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। তিনি বিচিত্রায়ও কিছুদিন কাজ করেন। তাঁর স্মৃতিচারণমূলক রচনা কল্লোল যুগ (১৯৫০) পাঠক-মহলে বেশ সাড়া জাগায়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জগত্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) ও শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ কল্লোল যুগ (১৯৫০) পাঠক-মহলে বেশ সাড়া জাগায়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি জগত্তারিণী পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) ও শরৎচন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫) লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।

অচিন্ত্যকুমারের গ্রন্থসংখ্যা সত্তরের মত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল।
উপন্যাস
• বেদে (১৯২৮) 
• কাকজোৎস্না (১৯৩১)
• বিবাহের চেয়ে বড় (১৯৩১)
• প্রাচীর ও প্রান্তর (১৯৩২)
• প্রথম কদমফুল (১৯৬১)
জীবনীগ্রন্থ
• পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (চার খন্ড ১৯৫২-১৯৫৭)
• বীরেশ্বর বিবেকানন্দ (তিন খণ্ড, ১৯৫৮-৬৯)
স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ
• কল্লোলযুগ (১৯৫০)
গল্পগ্রন্থ
• টুটা-ফুটা (১৯২৮)
• কাঠ খড় কেরোসিন (১৯৪৫)
• চাষাভুষা (১৯৪৭)
• হাড়ি মুচি ডোম (১৯৪৮)
• একরাত্রি (১৯৬১)
কাব্যগ্রন্থ
• অমাবস্যা (১৯৩০)
• আমরা (১৯৩৩)
• প্রিয়া ও পৃথিবী (১৯৩৬)
• নীল আকাশ (১৯৪৯)
• পূর্ব-পশ্চিম (১৯৬৯)
• উত্তরায়ণ (১৯৭৪)
নাটক
• একাঙ্ক নাট্য-সংকলন (১৯৪৫)

তথ্যসূত্র- বাংলাপিডিয়া 

Post a Comment

0 Comments