প্রত্যাবর্তন | আল মাহমুদ

প্রত্যাবর্তন 


আল মাহমুদ


আমরা কোথায় যাবো, কতদূর যেতে পারি আর

ওইতো সামনে নদী, ধানক্ষেত, পেছনে পাহাড়।

বাতাসে নুনের গন্ধ, পাখির পাপড়ি উড়ে যায় 

দক্ষিণ আকাশ জুড়ে সিক্তডানা সহস্র জোড়ায়; 

তবে কি বৃষ্টির দেশে এসে গেছি আমরা তাহলে 

তরঙ্গের মধ্যে শান্ত লোকালয়, খাল বিল জলে। 

দুঃখের রাজত্বে তবে পলাতক আমরা ক'জন 

আবার এসেছি ফিরে; আমাদের ক্লান্তিহীন মন 

একদিন জনপদ ছেড়ে এই ক্লান্ত কান্নাময় 

পরিণাম চিন্তা করে দেশত্যাগী কবির হৃদয় 

নিয়ে যেন পার হয়ে গিয়েছিলো নিজের এ কূল, 

কিন্তু আজ মাছ পাখি নাও নদী মাটির পুতুল 

বহমান মানুষের অনিবার্য প্রতীকের কাজে 

আবার এসেছে ফিরে অনুতপ্ত, নিজের সমাজে।


দেখলো নতুনভাবে ফুলগাছে বসন্তের পাখি 

লাফিয়ে বেড়ালো তার মিষ্টি শব্দে করে ডাকাডাকি 

নষ্ট একতারা নিয়ে মনে মনে গুন গুন গেয়ে 

দেখলো যে কৃষ্ণচূড়া সবুজের অন্তরাল ছেয়ে 

সমস্ত শক্তির মূল্যে জ্বেলে দিল ফুলের অনল; 

একটু বাতাসে কাঁপে ঝোপঝাড় পাখির মহল। 

দ্যাখো, জয়নুলের ছবির মত ঘরবাড়ি, নারী 

উঠোনে ঝাড়ছে ধান, ধানের ধুলোয় ম্লান শাড়ি; 

গতর উদোম করে হাতে লেপা মাটির চত্বরে 

লাঞ্চিত নিশেন হয়ে পড়ে আছে যেনো অনাদরে। 

প্রাণের রঙের মত পরাজিত প্রেমের কেতন 

আবার তুলতে চাই পলাতক আমরা ক'জন।


মানুষের বাসস্থান, লাউ মাচা, নীলাম্বরী নিয়ে 

আমরা থাকতে চাই; এ হৃদয় যেন ঝিলকিয়ে 

কখনো উঠতে চায়, আমাদের পূর্বপুরুষের 

তাড়ির আসরে গিয়ে অকস্মাৎ দাঁড়িয়ে নিজের 

আদিম সাহসে বলে, আমাদের হাতে হাতে দিন 

কর্পূর গন্ধের বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা বাসনা রঙিন।

Post a Comment

0 Comments